ঢাকা ২১শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:১০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২১
নাঈমা আক্তার রিতা:
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর” সেই অর্ধাঙ্গিনীর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে সংশয়ের অন্ত নেই। কেননা বাংলাদেশে খুনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড থাকা সত্বেও খুনের পরিমাণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, যৌতুক নিরোধ আইন থাকা সত্বেও যৌতুক যেন সামাজিক প্রথায় পরিনত হয়েছে, আবার দেখা যায় শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়া সত্বেও দিনের পর দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। তারমানে হলো আইন প্রণয়নে আমাদের কোন ঘাটতি নেই। ঘাটতিটা হলো আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। আর এজন্যই ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হলেও ধর্ষণ এখনো বন্ধ হয়নি। পত্রিকা খুললেই অহরহ ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে। “ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড “- কেবল এরূপ আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়েই কি নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণের মতো কলঙ্কজনক অধ্যায়ের অবসান ঘটবে? এতে করেই কি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে?
বাংলাদেশের জন্মলগ্নের পূর্ব থেকে আজ অবধি সংগঠিত সকল যুদ্ধ, বিগ্রহ, আন্দোলন, বিপ্লবে নারী পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। পিছন থেকে নারীরা শক্তি ও অনুপ্রেরণার যোগান দিয়ে এসেছে সৃষ্টির শুরু থেকেই। ৭১ এর দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাবো, সেসময়কার মহীয়সী নারীরাই তাদের স্বামী, পুত্র, ভাইকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য আহারের বন্দোবস্ত করেছে, বার্তা বাহকের কাজটিও তারাই করেছে, এমনকি সম্মুখযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতেও পিছপা হননি। যুদ্ধ পরবর্তী সময়টাতেও সরকারি বেসরকারি খাত, কৃষিখাত, পোশাকখাত, স্বাস্থ্যখাতসহ সর্বস্তরে নারীদের ভূমিকা গর্ব করার মতো। দেশের আজকের চোখ ধাধানো উন্নয়নের সমান অংশীদার দেশের নারী সমাজ। অথচ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও এই নারী সমাজ আজ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পায়নি। অপশক্তির উত্থান এবং কিছু দেশীয় দোসর ও হায়েনার দল অর্জিত স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করার নেশায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের মতো ঘৃন্য কর্মকাণ্ড ক্লান্তিহীন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনি বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করে আইন প্রনয়ণ করেন। তবে আইন প্রয়োগের পরেও যথাযথ বাস্তবায়ন দৃশ্যমান না হওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না ধর্ষন।
তাই ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট বর্বর অপকর্ম রোধে সরকার এবং প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আইন প্রণয়নের চেয়ে বাস্তবায়ন জরুরি। তাই দেশের সকল ধর্ষণ মামলায় “ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড ” তা বাস্তবায়ন করা হোক। দেশে আইনের ছড়াছড়ি থাকা সত্বেও বাস্তবায়নের পিছনে যে সকল অন্তরায় রয়েছে তা উদঘাটন করা হোক।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, পক্ষপাতদুষ্টতা এসকল বিষয় মূলসহ উৎপাটন না হলে কখনোই আইনের কঠোর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই প্রশাসনকে প্রথমে নিজের স্বচ্ছ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে, তারপরে কঠোর হস্তে এসকল বিষয় তদারকি করতে হবে। এছাড়াও নারীর প্রতি সমাজের অসুস্থ মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে, সমাজের সকল স্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমার দেশ নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে সক্ষম হবে।
শিক্ষার্থী,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
এ্যাডভোকেট রিদুয়ানুল হক শাকিল
জজকোর্ট, চট্টগ্রাম।
যোগাযোগ: মোস্তফা মৃধা বাড়ী, মধ্য পাড়া, পান্ডুঘর-৩৪৬১, বাঙ্গরা বাজার, মুরাদনগর, কুমিল্লা।
ইমেইল- jobayershopnoghuri@gmail.com
© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বপ্নঘুড়ি.কম এ প্রকাশিত লেখা কপি করা নিষেধ Developed by Sazal Ahmed